মূসক হার ১৫% বনাম হ্রাসকৃত উৎপাদনকারীর জন্য কোনটি বেশি লাভজনক ?
আমাদের দেশের ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় অধিকাংশ উৎপাদনমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মূসকের হার ১৫%। কারণ মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ধারা ১৫ (৩) মোতাবেক করযোগ্য সরবরাহ বা করযোগ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূসকের হার হবে ১৫% এভাবে নির্ধারিত করা আছে। তবে সরকার জনস্বার্থে তৃতীয় তফসিলের মাধ্যমে কিছু কিছু পণ্যের স্থানীয় সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে এবং কিছু কিছু সেবার স্থানীয় সরবরাহের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত মূসকের হার বা সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কর নির্ধারণ করে রেখেছে। একজন ব্যবসায়ী বা সেবা সরবরাহকারী যদি তৃতীয় তফসীলে বর্ণিত পণ্য বা সেবাসমূহ সরবরাহ করেন সেক্ষেত্রে উক্ত তফসিলে বর্ণিত হ্রাসকৃত বা সুনির্দিষ্ট মূসকের হার পরিপালন করবেন। তবে আইনের ধারা ১৫ (৩) এ উল্লেখ রয়েছে যে, কোন নিবন্ধিত ব্যক্তি তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত হ্রাসকৃত মূসক হার কিংবা সুনির্দিষ্ট করের পরিবর্তে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ১৫% হারে মূসক প্রদান করতে পারবে।
এখানেই একজন ব্যবসায়ী বা সরবরাহকারীর প্রশ্ন আসে যে, যেখানে আইন তাকে হ্রাসকৃত মূসকহার বা সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কর নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে তিনি কেন ১৫% মূসকের হার পরিপালন করবেন। একজন উৎপাদনকারীর জন্য হ্রাসকৃত মূসকের হার এর চেয়ে ১৫% মূসকের হার পরিপালন করা অত্যন্ত লাভজনক। যদি ওই উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ী চায় তাহলে তিনি যেন ১৫% মূসকের হার পরিপালন করতে পারেন সেজন্যই আইন ব্যবসায়ীর আর্থিক লাভের কথা চিন্তায় রেখে এরকম একটি বিধান রেখেছে।
ü ধরি, কোন একজন উৎপাদনকারীর কাঁচামালের ক্রয়মূল্য ১০০ টাকা (মূসক অন্তর্ভুক্ত) সুতরাং, মূসকের পরিমান (১০০ * ১৫/১১৫) = ১৩.০৪ টাকা। কাঁচামালের প্রকৃত মূল্য = (১০০ - ১৩.০৫) = ৮৫.৯৬ টাকা। ঐ উৎপাদনকারী মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৩২(৫) এবং বিধি ২১ অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের পূর্বে মূল্য ঘোষনা দাখিল করেন। যেখানে তিনি তার প্রকৃত মূল্য সংযোজন ২৫% প্রদর্শন করেন। এ পর্যায়ে তার পন্যের মূল্য দাঁড়ায় (১০০ + ২৫) = ১২৫ টাকা। যদি তার এই প্রকৃত মূল্য সংযোজন সংশ্লিষ্ট মূসক কর্মকর্তা মেনে নেন তাহলে ঐ উৎপাদনকারীর বিক্রয়মূল্য হবে {১২৫ + (১২৫ * ১৫%)} = ১২৫ + ১৮ = ১৪৩.৭৫ টাকা। এখন তিনি যেহেতু ১৫% মূসক পরিপালন করেছেন, তাই উক্ত উৎপাদনকারী তার দাখিলপত্রে (রিটার্নে) কাঁচামালের উপর পরিশোধিত ১৩.০৪ টাকা মূসক রেয়াত নিবেন অর্থাৎ ফেরত পাবেন। এক্ষেত্রে তিনি বিক্রয়ের উপর পরিশোধতব্য মূসকের পরিমাণ ১৮.৭৫ টাকা থেকে পূর্বের পরিশোধিত ১৩.০৪ টাকা বাদ দিয়ে বাদবাকি টাকা সরকারি ট্রেজারিতে জমা প্রদান করবেন। সুতরাং ১৮.৭৫ - ১৩.০৪ = ৫.৭১ টাকা প্রদান করবেন।
ü অপরদিকে ধরে নেই, উক্ত উৎপাদনকারী তৃতীয় তফসিলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এমন একটি পণ্য উৎপাদন করেন যার মূসকের হার ৫%। যদি তিনি ৫% মূসকের হার পরিপালন করেন তবে তার বিক্রয়মূল্য হবে {১২৫ + ১২৫ * ৫%)} = ১৩১.২৫ টাকা। এক্ষেত্রে উক্ত উৎপাদনকারী কিন্তু কোন রেয়াত প্রাপ্য হবেন না। তাকে ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে (১৩১.২৫ - ১২৫) = ৬.২৫ টাকা। পক্ষান্তরে, উক্ত উৎপাদনকারী যদি ১৫% মূসকের হার পরিপালন করতেন তাহলে তাকে (৬.২৫ - ৫.৭১) = ০.৫৪ টাকা কম পরিশোধ করতে হতো কারণ তিনি রেয়াতপ্রাপ্ত হবার কারণে তার প্রকৃত করের বোঝা কমে যায়।
এভাবে উক্ত উৎপাদনকারী যদি মাসে ৫০,০০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করেন তবে তার ২৭,০০০ (সাতাশ হাজার টাকা) কম মূসক পরিশোধ করতে হবে।
উপরের একটি রিয়েল লাইফ উদাহরণের মাধ্যমে আমরা সহজেই বুঝতে পারলাম যে একজন উৎপাদনকারী যদি ১৫% মূসকের হার পরিপালন করেন তাহলে তিনি প্রকৃতপক্ষে কম মূসক পরিশোধ করতে পারেন। একজন ১৫% মূসকের হার পরিপালনকারীকে আইন ও বিধির যেসকল বিধি—বিধান পরিপালন করতে হয় সেই একই বিধি—বিধান একজন হ্রাসকৃত মূসকের হার পরিপালনকারীকে পালন করতে হয়। তাই একটি উৎপাদনমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মূসকের হার ১৫% সহ আইনের সকল বিধি—বিধান প্রতিপালন করা অধিক লাভজনক।